বিষয়- বৈশাখ
বিভাগ- অণুগল্প
শিরোনাম- নির্দয়ী সন্তান
রচনা- প্রহ্লাদ কুমার প্রভাস (pk)
রচনাকাল- 11.04.24
জমা- 11.04.24
সকাল থেকেই রুদ্র আর তার বউ অনিমা দুজনেই খুব ব্যস্ত। অনিমা লকার থেকে তার বাবার দেওয়া চওড়া স্বর্ণের হার বের করে গলায় দিল। সাথে তার স্বামীর দেওয়া দামী মেকআপ বক্স থেকে লিপস্টিক, দামী মেকআপ নিল। লাল টুকটুকে শাড়ি পরল। হাতে দামি চুড়ি ও বিভিন্ন অলংকারের সজ্জিত হলো। ওদিকে রুদ্রও দামি গড়ি ও দামি পাঞ্জাবী পরলো। তারা ঘুরতে যাবে সাথে দুপুরে পাশের জগত ধাত্রী মা নামি- দামি রেস্টুরেন্ট থেকে লাঞ্চ করবে বলে প্লান করছে। এবং শহরের বিভিন্ন পার্ক সহ চিড়িয়াখানা ঘুরে বেড়াবে দুজন মিলে। কারণ আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালির শুভ নববর্ষ। সকাল প্রায়ই নটা। দুজনেই রেডি সবে ঘর থেকে বের হবে। তখনই দরজায় বৃদ্ধ মা। মাকে দেখেই রুদ্রের বউ সামান্য ভুরু কুচকে মনে মনে বলে উঠলো ” ওই এসে হাজির যাব এক শুভ কাজে অপায়র মুখ দেখতে হলো সক্কাল সক্কাল। জানি না কি হবে সারাটা দিন”।
বৃদ্ধ মা রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, ” খোকা, তোরা বের হচ্ছিস বাবা? কিন্তু ঘরে তো আমাদের চাল নাই বাবা একটু দেখনা রে। তোর বাবা যে সেই কাল দুপুর থেকে না খেয়ে আছে। আমার কথা না হয় বাদই দে আমার খাওয়া লাগবে না। আমি কদিই বা বাঁচব? কিন্তু তোর বাবা যে খিদে সহ্য করতে পারে না খোকা। তবুও কাল দুপুর থেকে শুধু জল খেয়ে আছে। আমি অনেকবার তোদের বলব বলব ভাবছি কিন্তু উনি বলতে দেন নি তোরা নববর্ষের বাজার করতে গেছিলি কিনা তাই রাতে ফিরলে কষ্ট হয়েছে এই ভেবে বলতে দেননি। দেখ নারে বাবা একটু। উনি যে খুব কষ্ট পাচ্ছে। তাছাড়াও কাল থেকে ওষুধ গুলোও খাননি ঠিক মতো। রুদ্র সামান্য বিরক্তি হয়ে বলল, ” ওই শুরু হয়ে গেছে। দেখছো তো এক জায়গাই বের হচ্ছি? ওমনি দিলে তো মুড টা মাটি করে? সারাদিন শুধু খাওয়া আর খাওয়া। তোমাদের তো গান্ডেপিন্ডে গেলালেও কখনও বলবে না থাক বাবা অনেক হয়েছে আর পারছি না। খেয়ে খেয়েই তো বাবার আজ এই অবস্থা। আগে খাবার খেয়েছে আর এখন ওষুধ। পাশ থেকে বউ বলে, ” ওগো, চলোত আমাদের দেরী হয়ে যাচ্ছে আমার বান্ধবী আর তার বর আমাদের জন্য ওয়েট করছে চলোত”। রুদ্র পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে ছুড়ে দিয়ে বলে” যাও এই টাকা দিয়ে কিছু এনে আমায় উদ্ধার করো কাউকে দিয়ে। নাও পথ ছাড়ো এবার “।
বলেই দুজনেই বেরিয়ে গেল আর মা দরজায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দুইচোখের জলে শাড়ি ভেজাচ্ছে আর ভাবছে ” এই কি তার সেই খোকা যে দুটাকার জন্য এক সময় মায়ের শাড়ি ধরে টানতো আর আজ সেই মায়ের দু- মুঠো ভাতের জন্য সেই শাড়িই ভিজাতে হচ্ছে তাও চোখের জলে? বাহ, বাহরে সন্তান” !!