শিরোনাম – “হাল জমি”
রচনা- প্রহ্লাদ কুমার দাশ (p.k)
রচনাকাল- 06.01.24
জমা- 11.03.24
উচ্চাসনে বসিয়াছি আমি,অঢেল সহায় সম্পত্তি।
পাশের বাড়ির হরির ছোট্ট জমিটা পাইলে রির্সোটটা হইতো জলদি।
ভাবিয়াছি আমি অনেক দিন ধরিয়া চিন্তে মনে মনে।
রির্সোট টা হইলে শেষ, চুক্তি টা করিব পরিশেষ,
যাহা দেওয়া আছে সেই রাশিয়ান দের সনে।
কে আছো? পেয়াদা, উজির তলব করো তাহারে।
বলিবে গিয়া,ন্যার্য্য মূল্য দিয়া কিনিয়া লইবে
জমি গড়ের জমিদারে।
শীর্ণ শরীর,জীর্ণ বস্ত্র মায়া ভরা চক্ষে
হরি আসিয়া, দাড়ালো হাত বাধিয়া নিজের বক্ষে।
হইয়া ধীর, নত করি শীর বলিলো নিচু স্বরে।
পিতৃভিটা মোর, সহায় বলিতে এই বড়ো জোর আর যে কিছুই নাই।
জীর্ণ কুঠির খানি, ঘরেতে দুঃখের হাতছানি হাল চাষ করিয়া খাই।
ভার্যা পুত্রাদি, মরিবে অতি জলদি যদি ভিটে ছাড়িয়া যায়।
চাষী জমি মোর, এটাতো সম্বল
চাষ করিবার আর জায়গা তো নাই।
বাবু কহিলেন হেসে, হরির কাছে এসে
গর্দান যাইবে তোমা যদি এই জমি না পাই।
দারা পুত্র মরিবে অচিরে, যদি এখান থেকে না যাও ফিরে
কি করিবে তখন,কি হইবে উপায়?
থাকিতে সময়, ভাবো অতিশয়
হাল থাকিলো, জমি থাকিলো যদি গরু না থাকে গোয়ালে।
দারা, পুত্র পরিবার,কোথায় যাইবে তোমার?
চাষই বা হইবে কোন হালে??।
হরি কহিলেন ভাবি, আমি বড়ো অভাবী ছিলাম আপনার খাস।
একদা কোন সময়, খাই বা না খাই দেখিতাম আপনার খামার করিতাম জমি চাষ।।
ধরি ধরি আমি, আপনার পায়ে পড়ি ঘুচান হে আপনও আশ।
এই দিনোহীনে চেয়ে, পড়ি তব পায়ে নিও না কাড়িয়া এই দাসেরও আবাস।
বিঘে চার মোর আছে বড়ো জোর আর সব তো নিয়াছেন কাঁড়িয়া!
অধম এই কাঙাল কে দাস জানিয়া এটুকু মোদের দাও হে ছাড়িয়া।
ফলে ফলে গাছ, ভরিয়াছে আজ গরীবের বাগান খানি।
বছর শেষে, সামান্য দামে যাহা পরিবারের মুখে একটু অন্ন দেয় আনি।
ভালোই ভালো, দিলেই আলো পাইবি এই জীবনে।
জমির সাথে জীবন গেলে পরিবার বাচাইবি কেমনে?
ভাঙা ঘরে, আছে ভোরে চাঁদের আলোয় এই তো আছি বেশ।
ছোট্ট কুটির খানি মোর, কেন আনিতে চাও হে ঘোর? এইতো মোর আশা সর্বশেষ।
ঠাই দিন ঠাই দিন থাকিবো ঋণী, মোরা চিরদিনই আপনি মোদেরও কান্ডারী।
প্রসাদ তব মহারাজের সাজে, আমার দেওয়ার কিবা আছে? দাড়িয়েছো তুমি ভিখারির বেশ ধরী।
তুমি জমিদার, সাজিয়াছো কাঙাল আমি আজ ধণী বটে।
রাজপ্রাসাদে থাকো, গরীবের পেটে লাথি মারো এই ছিল তব ঘটে?
“তুই চুপ থাক, ছোটলোকের ছাগ কাটিয়া নিব গর্দান।
করিব ভিটে ছাড়া, পুত্র, দারা কাড়িয়া লইবো এই বাগান।।
বুজবি ফলে, জমিদারের বিপক্ষে বলে সুখে ক্যামনে থাকবে?
ছাড়িবে ঘর, হইবে দেশান্তর তুই যাবি যমের দক্ষিণ দুয়ারে।
হরি, উচ্চ করিয়া শীর, বলিল গভীর চাহিয়া জমিদারের পানে।
ধনীদের অভাব, মিটিবে না সব যত দিন এই ধরিত্রী থাকিবে।
বুজিলাম হেথায়, সবাই পিছে ধায় উচ্চ করিয়া শীর।
দাও দাও বলে, অবিরাম ছুটে চলে হয়ে পাওয়ার নেশায় অধির।
যিনি মহারাজ,ধরিয়া আজ পরোনে সাধুর ও বেশ।।
দেওয়ার নাম ধরে, নিচ্ছে লুটে গরবীবের সর্বশেষ।
প্রসাদে যাহার, সিংহাসনে বাহার সেও চায় লুটিতে।
টাকায় টাকার পাহাড়, কাড়িতে গরীবের আহার পিছপা হয় তাদের মারিতে।
এ কেমন মানুষ হায়!! শুধুই বলে চায়,চায় অসহায়কে পায়ে নিংড়িয়ে।
গরীবের শরীর সিড়ি যেন, মনে হয় এ হেন উঠিবে অট্টালিকায় তাদের কে নামিয়ে।
যতদিনই থাকিবে টাকা, এই চাওয়া শেষ হবে না নিবে তারা কাড়িয়া।
যতদিন থাকিবে ধরণী, তাদের নিষ্ঠুর চালে তিলে তিলে যাইবে নিঃশেষ হইয়া।।
স্বর্ত সংরক্ষিত
valo lekha