তেঁতুল হাটা গ্রামের সুরজিত বড়বাজারে গঙ্গারাম মাড়োয়ারির কাপড়ের দোকানে কর্মচারী ছিল। রোজ সকালে সাতটায় বেরিয়ে বাড়ি ফিরত সোয়া দশটার নামখানা গ্যালোপিনে। কিন্তু হালখাতার দিনে তার ফিরতে হলে শেষ ট্রেনের আশ্রয় নিতে হতো। টানা দুবছর মহামারির কারনে অক্ষয় তৃতীয়া বন্ধ থাকায় এই বছরে দেনাদার আর খুচরো ব্যবসায়ীদের চাপটা একটু বেশি ছিল। তাই অনুষ্ঠান শেষে যখন মিষ্টির প্যাকেট হাতে শিয়ালদহ স্টেশন পৌঁছল সুরজিত তখন নামখানার উদ্দেশ্যে শেষ ট্রেন বেরিয়ে গেছে। অগত্যা সে ঠিক করলো বারোটার কিছু আগের ডায়মন্ড হারবার লোকাল ধরে বারুইপুর নেমে বাইক রাইডার নিয়ে নেবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, অন্ধকারে ফাঁকা স্টেশন রোড দিয়ে আসতে আসতে মোবাইলের স্ক্রিন জ্বেলে রাইডার বুকিং অ্যাপটি খুলতে যাবে হঠাৎ বাইক নিয়ে পিছন থেকে এসে হর্ন দিয়ে একজন ছেলে মাথায় হেলমেট পরিহিত অবস্থায় জিজ্ঞেস করলো বলুন স্যার কোথায় যাবেন। সুরজিতের কেমন মনে হলো ছেলেটার গলা খুব মিহি আর শীতল। কি জানি হয়ত সারাদিনে সেরকম প্যাসেজ্ঞার পায়নি বলেই মন খারাপ হয়তো বা শরীর খারাপ হতেও পারে। যাইহোক রাতের বেলায় রাইডার যখন হাতের কাছে পাওয়া গেছে তখন ভাড়ার হিসেব আগে মিটিয়ে নেওয়াই ভালো। তাই ভাড়া কত জিজ্ঞেস করায় সে একশো ত্রিশ টাকা বললো কিন্তু সুরজিত নব্বইয়ের বেশি কিছুতেই রাজি হলো না। শেষমেশ নব্বই টাকায় যেতে রাজি হলো সেই রাইডার। বাইকে উঠে যখন তার শরীর ঐ আরোহীর শরীরের সাথে ঠেকল মনে হলো খুব যেন হালকা তার শরীর। সুরজিত মনে মনে ভাবল এত কিছু জেনে তার তো লাভ নেই, এত রাতে এমনি দেড়শো কমে ভাড়া পাওয়া মুশকিল ছিল। সুরজিত দেখলো আরোহী মেন রোড ধরে না গিয়ে ঘুর পথে পেট্রোল মোড়ের গলি ধরলো। এতে বেশ অবাকই হলো সুরজিত কারন এই রাস্তায় একটু ঘুরে যেতে হয় তাই সময় ও পেট্রোল দুটোর অপচয় ঘটে। কিজানি হয়ত মেন রাস্তায় আরো অনেক আরোহী আছে, তারা হয়তো আরো কম মূল্যে তাকে পৌঁছে দেবার অফার দিলে এই আরোহীর সুরজিত কে হাতছাড়া হয়ে যেত। আবার পুলিশের কারনে এই রাস্তায় আসেনি তো সে। ক্রসিং গেটের কাছে প্রায় রাতে আবগারি পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে। আচ্ছা সে তো চোর বদমাইশ হতে পারে, যদি তার সব কিছু ছিন্তাই করে নেয়। যেহেতু বুকিং করেনি তাই কোন ডিটেলস ও তো পরে পাওয়া যাবেনা। কিন্তু গাড়ির নম্বর প্লেট সে দেখে রেখেছে, ফোনে বৌকে সেই নম্বর হোয়াটসঅ্যাপ করতে করতে সুরজিত রাইডার কে জিজ্ঞেস করলো কতদিন সে এই পেশায় আছে? উত্তরে খুব ঠাণ্ডা স্বরে সে জানালো প্রায় দুইবছর। তারপর তার সমস্ত ইতিহাস যেমন নাম, ধাম, পরিবার সব কিছু জানতে চাইলো সুরজিত। উত্তরে রাইডার জানায় তার নাম রমিত সিংহ, বাড়ি খুতনগর গ্রামে। কিন্তু পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করায় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল নব্বই টা একশো যদি করে দেয় খুব উপকৃত হয় সে। কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত করলো না সুরজিত। আরও কিছুক্ষন চুপ থেকে সে হিম শীতল গলায় বললো জানেন মাস চারেক আগে এক রাতে এরকম এক ভাড়া তুলি গাড়িতে। একশো ত্রিশ টাকাই চেয়েছিলাম কিন্তু সত্তর টাকা মাত্র দেবে বলে সে। আমি রাজি হয়ে যাই, বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রয়েছে টাকার খুব দরকার। ভাবলাম বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে কুড়ি টা টাকা বকশিস চাইবো তাই সে পিছনে বসে সে যা প্রশ্ন করছিল উত্তর দিছিলাম। আর বার বার তাকে পিছনে ফিরে বোঝাচ্ছিলাম যে তার কোন চিন্তা নেই আমি থাকতে একেবারে বাড়ির গেটের সামনে নামিয়ে দেব। শুধু যেন কুড়িটা টাকা বেশি দেয় না হলে পেট্রোলের যা দাম! কিন্তু বার বার ফিরে দেখি তার মুখ ভাবলেশহীন। এমন সে মুখ মেন কুড়ি কেন দুটাকা চাইলেও পাবো না। এইসব ভাবতে ভাবতে আর বার বার পিছন ফিরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বলতে সামনে থেকে ঐ যেরকম লরিটা আসছে সেরকম একটা লরি এসে দুজন কে চাপা দিয়ে চলে গেল বুঝতেই পারিনি।
সুরজিত ঘামতে ঘামতে দেখলো আরোহীর হেলমেট পরা মাথা পুরোপুরি ঘুরে গেছে তার দিকে, চোখ থেকে হেলমেটের মধ্যে দিয়ে ঠিকরে বেরোচ্ছে আগুন আর দূর থেকে তীব্র গতিতে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে আট চাকার এক পণ্য বোঝাই লরি
খুবই দুঃখজনক একটি ভৌতিক কাহিনী পড়লাম
ধন্যবাদ আরোহীর জীবনের স্পর্শ কাতর দিক টাকে বোঝার জন্য
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো
ধন্যবাদ