বিপদের বাঁশি
কলমে ~ শুভদীপ নাথ
শঙ্কর দত্ত, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, চুলে আজকেই সকালের কলপ করা সখের মেহেন্দি রং আগুন ঝলমলে, টিভির সামনে বসে আছেন। খবর চলছে, ‘এবার হার না মানলে বিদ্যুৎ বিভাগের দফতরে তালা লাগবে!’
হঠাৎ লোড শেডিং। শঙ্কর দত্তের চোখ জ্বলে উঠলো। শেষ চা টা চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর মাস্টার প্লান চালানোর সময় হয়েছে।
রাত দশটা। গলিটা অন্ধকার।এক হাতে লাঠি এক হাতে মস্ত টর্চ নিয়ে বেরিয়েছেন শঙ্কর। পকেটে একটা বাঁশি। আজকে বিদ্যুৎ বিভাগের মর্যাদা নষ্ট করবেন তিনি! ছোটবেলার নেতা হওয়ার ইচ্ছেটা আজ অনেকদিন পরে, খুসখুসে কাশির মত সঠিক অনুপ্রেরণা পেয়ে ভক করে ঠেলে উঠেছে।
একটু এগিয়েই হঠাৎ থমকে গেলেন। বিদ্যুৎ অফিসের দরজায় তালা ঝুলছে ঠিকই, কিন্তু ভিতর থেকে আলো জ্বলজ্বল করছে! কী কাণ্ড?
শঙ্কর সাবধানে জানলার কাছে এগিয়ে গেলেন। ভিতরে দেখা যায় একটা লোক টেবিলে বসে কাগজপত্র দেখছে। আর পাশেই একটা মোটা বই, যার ওপর লেখা ‘ভূতের গল্প’।
শঙ্কর দত্তের গা বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেলো। পরক্ষনেই দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেন, “কী করছেন আপনি? বিদ্যুৎ নেই, অফিসে আলো জ্বলছে? আর ভূতের গল্প পড়ছেন?”
লোকটা চমকে তাকালেন। তারপর হাসতে হাসতে কাশতে লাগলেন। “আপনি কে? এত রাতে…”
“আমি বিদ্যুৎ চাই!” গম্ভীর গলায় বললেন শঙ্কর।
লোকটা হাসি থামিয়ে বললেন, “ভাই, ট্রান্সফর্মারটা জ্বলে গেছে। ঠিক করতে সময় লাগবে।”
“কী? জ্বলে গেছে? তাহলে এত আলো কী?”
লোকটা জানলার দিকে ইশারা করলেন। “বাইরে থেকে আলো আসছে। আর এই বইটা, আমার ভয় লাগে না বলেই পড়ছি।”
শঙ্কর মুখ বন্ধ। তার বিপদে বাঁশি দেওয়ার সব আশা উবে গেল। হতাশায় বললেন, “তাহলে আজকে…”
“আজকে কিছুই নেই,” হেসে উত্তর দিলেন লোকটা। “যদি না আপনি জেনারেটর চালিয়ে দিতে পারেন!”
শঙ্কর দত্ত আর কোনো কথা না বলে লেজ গুটিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। রাতের অন্ধকারে তার মুখের অবস্থা দেখা যেত না!