এক টুকরো জমির ওপর মাটি বাঁধা ঘর,
মাঝে মধ্যে থাকে এসে মেয়ে দুটোর বর।
মাটির ছেলে আমি এক গরীব ভাগচাষী,
ফসল আর জমিরে তাই বড্ড ভালবাসি।
লাঙ্গল কাঁধে হাঁটার পথে সঙ্গী হয় ছেলে,
একবেলা তবু খেতে পেত স্কুল সে গেলে।
খেটে দিন ভর ক্ষেতে দেয় না শরীর সায়,
শহরে মেদ ঝরাতে জিমে নাকি সব যায়।
দুপুর রোদ তেষ্টা মেটানো ভরা ঘটি জল,
দুক্রোশ দূর বসানো গ্রামে একখানি কল।
কৃষকের হিতে কত স্কিম বছরে করে বার,
চড়া দামে বিক্রি তাও উন্নত বীজ ও সার।
প্রকৃতি রেগে গেলেই বন্যা খরার প্রকোপ,
পাখির থেকে বাঁচায় কাক তারুয়ার টোপ।
ভিটে যখন পা পড়ল তুলসী তলায় বাতি,
বিদ্যুৎহীন ঘরে তাই বাতাস জুড়ায় ছাতি।
রাতের বেলায় আবার এক সেদ্ধ চড়চড়ি,
শ্যালীর বিয়ে সামনে দিতে হবে হাত ঘড়ি।
ভোর হলে ঝাঁকা মাথায় চলি হাটের দিকে,
ভ্যান ভাড়ার কথা ভেবে দূরত্ব যেন ফিকে।
বাবুরা সব অঙ্ক কষে ভালো করে দরদাম,
মলেতে ফিক্সড প্রাইস দামী ব্র্যান্ডের নাম।
অল্প লাভ হয় যেটুকু ফুরায় করে বাজার,
ফিরলে ঘরে বৌ শোনায় ফিরিস্তি হাজার।
খবরে শুনি দেশে কোটি টাকা কেলেঙ্কারি,
চাষীর ট্যাক্স মকুব হলে মন্ত্রীর রাগ ভারী।
ব্যাংকে গেলে পড়ে বোঝায় লোনের নীতি,
শুধাতে না পারলে ভিটে হারানোর ভীতি।
লক্ষ কোটি কতো ঠগী নিত্ত নৈমিত্তি মারে,
কৃষক টলমলে চলে ঋণের দায়ের ভারে।
বেলা শেষে মুক্তির পথ দেখে সে অগত্যা,
সভ্যসমাজ নাম দিয়েছে যারে আত্মহত্যা।
ভাগচাষি
Share