বীরেশ্বর কর্মকারের পিতা কাশীনাথ কর্মকারের নাম ডাক ছিলো দশ গাঁ জুড়ে। এককালে বিশেষ করে মেলা পার্বনে কেশো কামারের (বিড়ি টেনে অতিরিক্ত কাশত বলে নাম কেশো কামার) দা, কাস্তে, হেঁশো, বটি, নিড়ুনি ইত্যাদির চাহিদা ছিল ব্যাপক। চাষীদের জন্য তৈরি করা পন্য সূর্য নগর(বীরেশ্বর দের গ্ৰাম) কে যেন আরও শস্য শ্যামলা করে তুলেছিল। তবে পরিশ্রমের সাথে সাথে তার কাজের প্রতি আন্তরিকতা আর বিশ্বকর্মা পূজোর সময় নিমন্ত্রিত খরিদ্দারের সাথে অমায়িক ব্যবহার ও অতিথি আপ্যায়ন তাঁকে চাহিদার শিখর শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু দিনে দিনে বাজার ছেয়ে গেল রেডিমেড দা, কাস্তে। ফলে দর ও পারিশ্রমিক দুইই কমে গেল কাশীনাথের। তাই দোকানে তার কাজের সাথী এবং একমাত্র কর্মচারী শম্ভুনাথ কে শহরে অন্য কাজের সন্ধানে পাঠালো সে। তবে একা হাতে হাপর টানা আর লোহা পেটা সম্ভব নয় তাই নতুন সহকর্মী হিসাবে যোগ দিল তার একান্ত পুত্র সদ্য কৈশোরে পাওয়া দেওয়া বীরেশ্বর ওরফে বীরু। ভাই কে সে নিপুণ হাতে কাজ শেখালেও কলকাতার হাওয়ায় কাজ করতে চাওয়া শম্ভু দাদার গুরুদক্ষিণার মূল্য টের পেল না। তাই আগামী প্রজন্মের মধ্যে যাতে তার শিল্প সত্ত্বার জিন বাহিত হয় সেই জন্য খুব সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর শৈল্পিক কৌশল সে তার পুত্রের সামনে তুলে ধরলো।
আজ বিশ বছর পর কামার দের নতুন পাকা বাড়িতে বিশ্বকর্মা পূজোয় অনেকেই আমন্ত্রিত। এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন সেই অতিথি তালিকায়। প্রসাদের বাটি থেকে নাড়ু মুখে পুরে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বীরেশ্বর কে আটশো গ্ৰাম ওজনের একটি বঁটির মজুরি কত জিজ্ঞেস করায় বাজার দরের সাথে আপস করা লাজুক বীরু কিছু বলতে যাচ্ছিল হঠাৎ পেছন থেকে বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে কাশতে কাশতে বৃদ্ধ কাশীনাথ কামার বললো, আপনার ইমান যা বলে সেই মূল্য দেবেন হোসেন সাহেব!
এই বাংলা লেখায় বিশেষভাবে একজন শ্রমিকের জীবনকে বর্ণনা করে। কাশীনাথ কর্মকারের পিতা ছিলেন একজন কর্মকার। তার সন্তান বীরেশ্বর কাজের কারণে অনেক পরিশ্রম করতেন, কিন্তু তার সঠিক মূল্য পাওয়া যায়নি।
একদম তাই
যে কোনো শ্রমিক কোনোদিন তার পরিশ্রমের পুরো টাকা পায় না কারণ ধনীদের অতিরিক্ত টাকার উৎস তো এই শ্রমিক শ্রেণীর বঞ্চিত টাকার ভাগ।
একদম ঠিক তাই পুঁজিবাদ সবসময় দালালের ভুমিকা নিয়ে এসেছে
আবেঘন একটি গল্প
ধন্যবাদ মূহুর্তের গভীরতা উপলব্ধি করার জন্য