ম্যাথে এম.এস.সি অভ্রর পেশা ছিল টিউশনি। চাকরির পরীক্ষায় বেশ কয়েকবার বসার পর যখন চেষ্টা বিফলে গেল তখন আর্থিক টানাপোড়েনে শেষমেশ টিউশনির রাস্তায় হাঁটল অভ্রদীপ নস্কর।তবে গনিতে গভীর জ্ঞানের জন্য নামি দামি আই.সি.এস.সি আর সি.বি.এস.সি বোর্ডের স্কুল পড়ুয়াদের টিউশন পড়িয়ে ভালোই আয় তার। আর এইসব স্কুলে মূলতঃ ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েদের ভর্তি হতে দেখা যায় তাই টিউশনির টাকার অঙ্কটা বেশ ভালোই তার কাছে। মাথার উপর অবিবাহিত বোন থাকলে চিন্তা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে এই ছাত্রছাত্রীদের জন্য তার দম্ভ ছিল খুব। গ্রামের সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের সে বড় তুচ্ছ চোখে দেখত। তার কাছে মনে হতো গ্রামের স্কুলের এই ছাত্রদের মেধার মূল্য নেহাৎ ফেলনা। একদা এই নিয়ে সে তার এক বন্ধু সাবিরের সাথে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। সাবির মূলতঃ গ্রামের ছেলেদের পড়াতো এবং তার ধারনা সরকারি স্কুলে ইংরেজি ও কম্পিউটার শিক্ষায় জোর দিলে এই গ্রামের ছেলেদের কাছে শহরের ছেলেরা পেরে উঠবে না। তার বিশ্বাস ইংরাজি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের কম্পিউটার আর স্পোকেন ইংলিশ টা স্ট্রং বলেই তারা এগিয়ে। এই বচসার মধ্যেই তাদের ওপর এক বন্ধু রাহুল বললো ঠিক আছে তবে একটা ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হোক অভ্র আর সাবিরের স্টুডেন্ট দের মধ্যে। রাজি হয়ে গেল দুজনে। খেলাধুলা পড়াশোনার একটা অঙ্গ আর অভ্র জানত যে তার প্রায় পাঁচ ছয় জন ছাত্র স্কুলের হয়ে খেলে। তাদের দামি ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস, হেলমেট সবটাই আছে কিন্তু সাবিরের ছাত্রদের এসব কিছুই নেই,আর প্রাকটিস করেনা তাই একরকম জয় নিশ্চিত। ঠিক হলো পরাজিত দল বিজয়ী দলকে বিরিয়ানি খাওয়াবে।
অবশেষে খেলার দিন উপস্থিত হলো। দশ ওভারের খেলা আর প্রতি দলে আট জন করে খেলোয়াড়। টসে জিতে অভ্রর দল ওয়েলকিড বারূপাড়া (বারূপাড়াতে অভ্রর কোচিং) ব্যাট করতে নামলো একদম রনসজ্জায় সজ্জিত হয়ে। মাঠে নেমে প্রথম ওভারে স্পিন পেয়ে দুটো চার ও একটি দুইয়ের সহযোগিতায় দশ রান তুলে জোর গলায় বলতে লাগলো অভ্র আজ একশো উঠবে বোর্ডে। কিন্ত পরের ওভারে খালি পায়ে যে গতিবেগে বল ধেয়ে আসতে লাগলো তাতে ব্যাট ছোঁয়ানো দূরে থাক আত্মরক্ষাই যেন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো।শেষমেষ সাত ওভারে আটত্রিশ রানে যা উঠলো সাবিরের দল বালিপুর একাদশ পাঁচ ওভারে তুলে দেওয়ার পর মাথা নীচু করে সবার আগে বাইকে স্টার্ট দিলো অভ্র।